ঢাকা ০১:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম নমুনাসহ ২০২৫

Muhammad Hamidul Ahmed
  • আপডেট সময় : ১১:৫৯:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫ ১৩০ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম হলো একটি লিখিত চুক্তিকে বৈধভাবে আইনের আওতায় আনার নির্দিষ্ট ধাপ ও পদ্ধতি। সহজভাবে বলতে গেলে, এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম মানে হলো—চুক্তি করার সময় কীভাবে কাগজপত্র তৈরি করলে তা আইনত বৈধ ও ঝুঁকিমুক্ত হয়।

এগ্রিমেন্ট দলিল কী?

এগ্রিমেন্ট দলিল হলো দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে লিখিত চুক্তি, যেখানে উভয় পক্ষ তাদের দায়িত্ব, শর্ত ও অধিকার স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে। যেমন: ভাড়াটে ও বাড়ির মালিকের মধ্যে ভাড়ার চুক্তি, ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব চুক্তি, অথবা জমি কেনা-বেচার দলিল।

আমি একবার আমার এক বন্ধুকে দেখেছিলাম ভাড়ার ঘরে ওঠার সময় শুধু মুখে কথা বলে এগ্রিমেন্ট করেছিল। কয়েক মাস পর মালিক হঠাৎ ভাড়া বাড়িয়ে দিলেন, আর তখন কোনো লিখিত প্রমাণ না থাকায় বন্ধুটি সমস্যায় পড়লেন। এই অভিজ্ঞতা আমাকে বুঝিয়েছে, লিখিত এগ্রিমেন্ট দলিল ছাড়া বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া কখনোই নিরাপদ নয়।

এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম

এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম সঠিকভাবে না মানলে পুরো চুক্তি অবৈধ হতে পারে। সঠিকভাবে দলিল লেখার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা উচিত:

  1. পক্ষদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য লিখুন – নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর।
  2. চুক্তির উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে লিখুন – যেমন ভাড়া, ব্যবসা, সম্পত্তি ইত্যাদি।
  3. শর্তাবলী নির্দিষ্ট করুন – ভাড়া, মেয়াদ, অর্থ পরিশোধের নিয়ম ইত্যাদি।
  4. চুক্তির সময়সীমা দিন – কত দিনের জন্য কার্যকর থাকবে।
  5. সাক্ষী রাখুন – অন্তত দুইজন সাক্ষীর নাম, স্বাক্ষর ও পরিচয় নিশ্চিত করুন।
  6. স্ট্যাম্প ও রেজিস্ট্রেশন করুন – বৈধতার জন্য সরকার অনুমোদিত স্ট্যাম্প ব্যবহার করুন।
  7. নোটারি পাবলিকের সীল নিন – প্রয়োজন হলে নোটারাইজ করানো ভালো।

ভাড়ার এগ্রিমেন্ট লেখার নিয়ম

বাংলাদেশে ভাড়ার চুক্তি করতে গেলে লিখিত এগ্রিমেন্ট দলিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে সাধারণত ভাড়ার টাকা, মেয়াদ, ভাড়াটের দায়িত্ব ও বাড়ির মালিকের শর্তাবলী স্পষ্টভাবে লেখা হয়। একজন বন্ধুর অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। তিনি ভাড়ার সময় চুক্তিতে “বিদ্যুৎ ও পানির বিল কে পরিশোধ করবে” তা উল্লেখ করেননি। ফলস্বরূপ, কয়েক মাস পর ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল। তাই এ ধরনের ছোট বিষয়ও দলিলে লেখা জরুরি।

ব্যবসায়িক এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম

ব্যবসা শুরু করতে গেলে অংশীদারদের মধ্যে স্পষ্ট এগ্রিমেন্ট থাকা অপরিহার্য। এতে লাভ-লোকসান ভাগাভাগি, দায়িত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিয়ম ও ব্যবসা বন্ধ হলে কী হবে তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা দরকার।
আমি নিজে একবার একটি স্টার্টআপে কাজ করার সময় দেখেছি—অংশীদারদের মধ্যে লিখিত এগ্রিমেন্ট না থাকায় মাঝপথে বিরোধ তৈরি হয়েছিল। যদি শুরুতেই একটি লিখিত চুক্তি থাকত, তাহলে সমস্যা এড়ানো যেত।

জমির এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম

বাংলাদেশে জমি কেনা-বেচা সবচেয়ে বেশি জটিলতা তৈরি করে। এখানে ভুল হলে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই জমির এগ্রিমেন্ট লেখার সময় নিশ্চিত হতে হবে।

  • খতিয়ান, পর্চা, দলিল যাচাই করা হয়েছে।
  • বিক্রেতার আসল মালিকানা আছে।
  • দলিল সঠিকভাবে স্ট্যাম্পে লেখা হয়েছে।
  • সাক্ষী ও রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে।

সাধারণ ভুল যা এড়ানো উচিত

  • মৌখিক চুক্তির উপর ভরসা করা।
  • স্ট্যাম্প বা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া দলিল করা।
  • অস্পষ্ট ভাষায় শর্ত লেখা।
  • সাক্ষী ছাড়া চুক্তি সম্পন্ন করা।
  • আইনজীবীর পরামর্শ না নেওয়া।

এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার টিপস

  • পরিষ্কার ও সহজ ভাষা ব্যবহার করুন।
  • প্রতিটি শর্ত লিখিতভাবে রাখুন, মৌখিকভাবে নয়।
  • ভবিষ্যতে ঝামেলা এড়াতে আইনি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
  • কাগজপত্রে তারিখ, স্বাক্ষর ও সাক্ষী ঠিকমতো আছে কিনা যাচাই করুন।

আমার শেষ মন্তব্য

এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম ২০২৫ অনুযায়ী মানলে ভবিষ্যতে অনেক বড় ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। চুক্তি করার সময় মনে রাখবেন—একটি ছোট্ট দলিল আপনাকে বড় বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে। তাই যেকোনো চুক্তি করার আগে লিখিত এগ্রিমেন্ট দলিল তৈরি করুন এবং আইনগত নিয়ম মেনে চলুন।

জমির চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম ২০২৫। আরো বিস্তারিত জানতে এইখানে যান।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Muhammad Hamidul Ahmed

আমি মূলত কন্টেন্ট লিখতে পছন্দ করি। Lekhapora Blog হচ্ছে বাংলা শিক্ষা বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট। এখানে প্রতিনিয়ত শিক্ষা, চাকরি, প্রযুক্তি, জীবন নিয়ে নতুন নতুন তথ্য এবং খবর প্রকাশ করা হবে।

এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম নমুনাসহ ২০২৫

আপডেট সময় : ১১:৫৯:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম হলো একটি লিখিত চুক্তিকে বৈধভাবে আইনের আওতায় আনার নির্দিষ্ট ধাপ ও পদ্ধতি। সহজভাবে বলতে গেলে, এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম মানে হলো—চুক্তি করার সময় কীভাবে কাগজপত্র তৈরি করলে তা আইনত বৈধ ও ঝুঁকিমুক্ত হয়।

এগ্রিমেন্ট দলিল কী?

এগ্রিমেন্ট দলিল হলো দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে লিখিত চুক্তি, যেখানে উভয় পক্ষ তাদের দায়িত্ব, শর্ত ও অধিকার স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে। যেমন: ভাড়াটে ও বাড়ির মালিকের মধ্যে ভাড়ার চুক্তি, ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব চুক্তি, অথবা জমি কেনা-বেচার দলিল।

আমি একবার আমার এক বন্ধুকে দেখেছিলাম ভাড়ার ঘরে ওঠার সময় শুধু মুখে কথা বলে এগ্রিমেন্ট করেছিল। কয়েক মাস পর মালিক হঠাৎ ভাড়া বাড়িয়ে দিলেন, আর তখন কোনো লিখিত প্রমাণ না থাকায় বন্ধুটি সমস্যায় পড়লেন। এই অভিজ্ঞতা আমাকে বুঝিয়েছে, লিখিত এগ্রিমেন্ট দলিল ছাড়া বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া কখনোই নিরাপদ নয়।

এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম

এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম সঠিকভাবে না মানলে পুরো চুক্তি অবৈধ হতে পারে। সঠিকভাবে দলিল লেখার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা উচিত:

  1. পক্ষদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য লিখুন – নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর।
  2. চুক্তির উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে লিখুন – যেমন ভাড়া, ব্যবসা, সম্পত্তি ইত্যাদি।
  3. শর্তাবলী নির্দিষ্ট করুন – ভাড়া, মেয়াদ, অর্থ পরিশোধের নিয়ম ইত্যাদি।
  4. চুক্তির সময়সীমা দিন – কত দিনের জন্য কার্যকর থাকবে।
  5. সাক্ষী রাখুন – অন্তত দুইজন সাক্ষীর নাম, স্বাক্ষর ও পরিচয় নিশ্চিত করুন।
  6. স্ট্যাম্প ও রেজিস্ট্রেশন করুন – বৈধতার জন্য সরকার অনুমোদিত স্ট্যাম্প ব্যবহার করুন।
  7. নোটারি পাবলিকের সীল নিন – প্রয়োজন হলে নোটারাইজ করানো ভালো।

ভাড়ার এগ্রিমেন্ট লেখার নিয়ম

বাংলাদেশে ভাড়ার চুক্তি করতে গেলে লিখিত এগ্রিমেন্ট দলিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে সাধারণত ভাড়ার টাকা, মেয়াদ, ভাড়াটের দায়িত্ব ও বাড়ির মালিকের শর্তাবলী স্পষ্টভাবে লেখা হয়। একজন বন্ধুর অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। তিনি ভাড়ার সময় চুক্তিতে “বিদ্যুৎ ও পানির বিল কে পরিশোধ করবে” তা উল্লেখ করেননি। ফলস্বরূপ, কয়েক মাস পর ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল। তাই এ ধরনের ছোট বিষয়ও দলিলে লেখা জরুরি।

ব্যবসায়িক এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম

ব্যবসা শুরু করতে গেলে অংশীদারদের মধ্যে স্পষ্ট এগ্রিমেন্ট থাকা অপরিহার্য। এতে লাভ-লোকসান ভাগাভাগি, দায়িত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিয়ম ও ব্যবসা বন্ধ হলে কী হবে তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা দরকার।
আমি নিজে একবার একটি স্টার্টআপে কাজ করার সময় দেখেছি—অংশীদারদের মধ্যে লিখিত এগ্রিমেন্ট না থাকায় মাঝপথে বিরোধ তৈরি হয়েছিল। যদি শুরুতেই একটি লিখিত চুক্তি থাকত, তাহলে সমস্যা এড়ানো যেত।

জমির এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম

বাংলাদেশে জমি কেনা-বেচা সবচেয়ে বেশি জটিলতা তৈরি করে। এখানে ভুল হলে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই জমির এগ্রিমেন্ট লেখার সময় নিশ্চিত হতে হবে।

  • খতিয়ান, পর্চা, দলিল যাচাই করা হয়েছে।
  • বিক্রেতার আসল মালিকানা আছে।
  • দলিল সঠিকভাবে স্ট্যাম্পে লেখা হয়েছে।
  • সাক্ষী ও রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে।

সাধারণ ভুল যা এড়ানো উচিত

  • মৌখিক চুক্তির উপর ভরসা করা।
  • স্ট্যাম্প বা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া দলিল করা।
  • অস্পষ্ট ভাষায় শর্ত লেখা।
  • সাক্ষী ছাড়া চুক্তি সম্পন্ন করা।
  • আইনজীবীর পরামর্শ না নেওয়া।

এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার টিপস

  • পরিষ্কার ও সহজ ভাষা ব্যবহার করুন।
  • প্রতিটি শর্ত লিখিতভাবে রাখুন, মৌখিকভাবে নয়।
  • ভবিষ্যতে ঝামেলা এড়াতে আইনি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
  • কাগজপত্রে তারিখ, স্বাক্ষর ও সাক্ষী ঠিকমতো আছে কিনা যাচাই করুন।

আমার শেষ মন্তব্য

এগ্রিমেন্ট দলিল লেখার নিয়ম ২০২৫ অনুযায়ী মানলে ভবিষ্যতে অনেক বড় ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। চুক্তি করার সময় মনে রাখবেন—একটি ছোট্ট দলিল আপনাকে বড় বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে। তাই যেকোনো চুক্তি করার আগে লিখিত এগ্রিমেন্ট দলিল তৈরি করুন এবং আইনগত নিয়ম মেনে চলুন।

জমির চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম ২০২৫। আরো বিস্তারিত জানতে এইখানে যান।