ছারপোকা কিভাবে সৃষ্টি হয়? বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, জীবচক্র ও প্রতিরোধের সহজ উপায়

- আপডেট সময় : ১১:৪২:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫ ৮১ বার পড়া হয়েছে
ছারপোকা কিভাবে সৃষ্টি হয়? আসলে ছারপোকা হঠাৎ করে সৃষ্টি হয় না, বরং ডিম থেকে বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।এটি এক ধরনের ছোট রক্তচোষা কীট যা মানুষের শরীর থেকে রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে এবং প্রজননের মাধ্যমে দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
ছারপোকা কিভাবে সৃষ্টি হয়?
ছারপোকা আসলে কোনো জাদুমন্ত্রে বা নোংরামি থেকে হঠাৎ জন্ম নেয় না। এরা প্রাপ্তবয়স্ক ছারপোকার ডিম থেকে জন্মায়। প্রতিটি স্ত্রী ছারপোকা জীবনে ২০০–২৫০টির মতো ডিম পাড়তে পারে। ডিম সাধারণত ৬–১০ দিনের মধ্যে ফোটে এবং ছোট ছোট নিম্ফ বের হয়। এরপর তারা ধাপে ধাপে বড় হয়ে পূর্ণাঙ্গ ছারপোকায় পরিণত হয়।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি: একবার নতুন একটা সোফা বাসায় নিয়ে আসার পর লক্ষ্য করলাম কয়েকদিনের মধ্যে বিছানার কোণে লালচে দাগ ও কামড়ের চিহ্ন দেখা দিল। তখন বুঝলাম সোফার ভেতরে লুকিয়ে থাকা ছারপোকাই সমস্যার মূল কারণ। অর্থাৎ, ছারপোকা আসলে বাইরে থেকে বাসায় ঢোকে এবং দ্রুত বংশবিস্তার শুরু করে।
ছারপোকার জীবচক্র (Life Cycle of Bed Bug)
- ডিম: ছোট সাদা রঙের, ১ মিমি এর মতো আকার।
- নিম্ফ: ডিম ফোটার পর ধাপে ধাপে ৫টি পর্যায় পার করে। প্রতিটি ধাপে রক্ত খেয়ে বড় হতে হয়।
- প্রাপ্তবয়স্ক ছারপোকা: বাদামি রঙের, আকার প্রায় ৫–৭ মিমি। খাবার ছাড়াই ৭০ দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
সহজ করে বললে, যতক্ষণ পর্যন্ত বাসায় তাদের জন্য আশ্রয় আর খাবারের ব্যবস্থা আছে, ততক্ষণ তারা টিকে থাকে এবং বংশবৃদ্ধি করে।
ছারপোকা কোথা থেকে আসে?
- ভ্রমণের সময় হোটেলের বেড থেকে লাগেজে চলে আসে।
- ব্যবহৃত আসবাবপত্র (সোফা, ম্যাট্রেস, কাঠের খাট) থেকে বাসায় প্রবেশ করে।
- ঘরের ফাটল, কার্পেটের নিচে বা বইয়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকে।
আমি একবার এক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম, রাতে তার ঘরে ঘুমানোর পর সকালে শরীরে ছোট ছোট কামড়ের দাগ পেলাম। পরে জানতে পারলাম তার ম্যাট্রেসে ছারপোকার উপদ্রব ছিল। এতে বোঝা যায় ছারপোকা মানুষের জীবনযাত্রার সাথে সহজেই মিশে যায়।
ভুল ধারণা: ছারপোকা নোংরা বাড়িতেই হয়?
অনেকেই ভাবে ছারপোকা শুধু অপরিচ্ছন্ন বাড়িতে হয়।
আসলে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ছারপোকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বা বিলাসবহুল বাড়িতেও হতে পারে যদি বাইরে থেকে ডিম বা প্রাপ্তবয়স্ক ছারপোকা এসে ঢুকে পড়ে।
ছারপোকা প্রতিরোধ ও নির্মূল করার উপায়
১. নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
- বিছানার চাদর ও বালিশ গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
- কার্পেট ও ফার্নিচার ভ্যাকুয়াম করুন।
- ঘরের ফাটল সিল করে দিন।
২. গরমে ধ্বংস
- ছারপোকা ৫০°C এর বেশি তাপে বাঁচতে পারে না।
- রোদে বিছানা বা কাপড় শুকালে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
৩. ঘরোয়া উপায়
- নিমপাতা, লেবুর রস, ল্যাভেন্ডার অয়েল অনেক সময় ছারপোকা দূরে রাখে।
- সিলিকা জেল বা বেকিং সোডা ছিটিয়েও কাজ করা যায়।
৪. পেশাদার সাহায্য
যদি উপদ্রব বেশি হয়, তাহলে পেশাদার পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস নেওয়াই সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
বাস্তব টিপস (আমার অভিজ্ঞতা থেকে)
একবার ভ্রমণ শেষে লাগেজ নিয়ে সরাসরি ঘরে ঢোকার বদলে আমি সেটি বারান্দায় রেখে গরম পানিতে সব কাপড় ধুয়ে নিয়েছিলাম। ফলাফল? কোনো ছারপোকা ঘরে প্রবেশ করতে পারেনি। আরেকবার এক আত্মীয় ব্যবহৃত খাট কিনে বাড়িতে আনার পরই পুরো ঘরে ছারপোকার উপদ্রব ছড়িয়ে যায়। তখন তারা পেশাদার টিম ডেকে সমস্যার সমাধান করেছিল।
আমার শেষ মন্তব্য
ছারপোকা কিভাবে সৃষ্টি হয় – এর উত্তর একটাই: ছারপোকা হঠাৎ জন্মায় না, বরং ডিম থেকে বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে বাসায় ছড়িয়ে পড়ে। অপরিষ্কার পরিবেশ ছারপোকার ঝুঁকি বাড়ালেও, আসল কারণ হলো ভ্রমণ, ব্যবহৃত আসবাবপত্র এবং বাইরে থেকে আসা প্রাপ্তবয়স্ক ছারপোকা। সমাধান একটাই: পরিচ্ছন্ন থাকা, সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নেওয়া। এভাবেই ছারপোকা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
বেসরকারি চাকরি হতে অব্যাহতির জন্য আবেদন পত্র লেখার নিয়ম। আরো বিস্তারিত জানতে এইখানে যান।