নতুন জমির চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম

- আপডেট সময় : ০৬:৩০:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫ ১০০ বার পড়া হয়েছে
জমির চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম অনেকের কাছেই জটিল মনে হয়। সহজ কথায় বলতে গেলে, জমির চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম হলো জমি কেনা-বেচার সময় সঠিক তথ্য, শর্তাবলী ও আইনগত প্রক্রিয়া লিখিতভাবে নথিভুক্ত করা। আমি নিজে একবার জমি কেনার সময় অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি।যদি শুরু থেকেই পরিষ্কার নিয়ম মেনে চুক্তিপত্র তৈরি করা না হয়, তবে ভবিষ্যতে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। তাই আজ আমি আপনাকে একেবারে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেব কিভাবে ২০২৫ সালে জমির চুক্তিপত্র তৈরি করবেন।
জমির চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম
চুক্তিপত্র হলো জমি ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে লিখিত সমঝোতা। এখানে দুই পক্ষের নাম, জমির বিস্তারিত বিবরণ, মূল্য, শর্তাবলী ও সাক্ষীর স্বাক্ষর থাকতে হবে। যদি কোনো একটি তথ্য বাদ যায়, তবে পুরো চুক্তি আইনি জটিলতায় পড়তে পারে।
চুক্তিপত্রে অবশ্যই যা লিখতে হবে
- ক্রেতা ও বিক্রেতার পুরো নাম, ঠিকানা ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর
- জমির খতিয়ান, দাগ নম্বর ও সীমানার বর্ণনা
- জমির পরিমাণ (ডেসিমেল বা কাঠা অনুযায়ী)
- মোট মূল্য ও টাকা পরিশোধের নিয়ম (যেমন—এককালীন বা কিস্তিতে)
- সাক্ষীর নাম ও স্বাক্ষর
- শর্তাবলী যেমন—নির্দিষ্ট সময়ে জমি হস্তান্তর
উদাহরণস্বরূপ, আমার এক পরিচিত জমি কেনার সময় খতিয়ান নম্বর ভুল লেখার কারণে আদালতে মামলা করতে হয়েছিল। তাই সব তথ্য নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
জমির দলিল আর চুক্তিপত্রের মধ্যে পার্থক্য
অনেকে মনে করেন দলিল আর চুক্তিপত্র একই জিনিস।
আসলে চুক্তিপত্র হলো প্রাথমিক সমঝোতা আর দলিল হলো চূড়ান্ত মালিকানা নথি। চুক্তিপত্রে ঠিক করা হয় জমি বিক্রি বা কেনা হবে, কিন্তু দলিল নিবন্ধিত হলে জমির মালিকানা আইনগতভাবে হস্তান্তর হয়।
জমি কেনাবেচার চুক্তিপত্রে আইনজীবীর ভূমিকা
আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি—আইনজীবীর সাহায্য ছাড়া জমির চুক্তিপত্র লেখা ঝুঁকিপূর্ণ। আইনজীবী কাগজপত্র যাচাই করেন, খসড়া তৈরি করেন এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেন। এছাড়া নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে দলিল বৈধ করা হলে ভবিষ্যতে সমস্যা কমে যায়।
সাধারণ ভুল যেগুলো এড়াতে হবে
- অসম্পূর্ণ নাম বা ঠিকানা লেখা
- জমির পরিমাণ সঠিকভাবে উল্লেখ না করা
- সাক্ষীর স্বাক্ষর বাদ পড়া
- ভুল খতিয়ান বা দাগ নম্বর লেখা
একবার আমার এক আত্মীয় চুক্তিপত্রে জমির সীমানা লিখতে ভুল করেছিলেন। পরে পাশের জমির মালিকের সঙ্গে বড় ঝামেলা হয়েছিল। তাই প্রতিটি তথ্য স্পষ্ট লেখা জরুরি।
২০২৫ সালের নতুন নিয়ম ও আপডেট
- এখন অনেক জেলায় ডিজিটাল নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
- সরকার জমির দলিল ও চুক্তিপত্র অনলাইনে যাচাই করার সুবিধা দিচ্ছে।
- ফলে কাগজপত্রে জালিয়াতি বা ভুল কম হবে।
জমির চুক্তিপত্র লেখার সহজ ধাপ
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (খতিয়ান, দাগ নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র) সংগ্রহ করুন।
- আইনজীবীর সাহায্যে খসড়া তৈরি করুন।
- উভয় পক্ষ পড়ে বুঝে স্বাক্ষর করুন।
- সাক্ষীর স্বাক্ষর নিন।
- নোটারি বা রেজিস্ট্রেশন অফিসে জমা দিন।
জমির চুক্তিপত্রে কত টাকা স্ট্যাম্প লাগে?
সাধারণত চুক্তিপত্রে স্ট্যাম্প ফি নির্ধারিত থাকে এবং এটি এলাকা ও জমির মূল্যের ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার ভেতরে চুক্তিপত্রের স্ট্যাম্প ফি গ্রামে তুলনায় বেশি হতে পারে।
আমার শেষ মন্তব্য
জমির চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম জানলে জমি কেনাবেচা অনেক সহজ হয়ে যায়। সবসময় নিশ্চিত হোন যে জমির তথ্য সঠিকভাবে লেখা হয়েছে এবং আইনজীবীর সহায়তা নিয়েছেন। মনে রাখবেন একটি সঠিক চুক্তিপত্র আপনাকে ভবিষ্যতের জটিলতা ও আইনি ঝামেলা থেকে রক্ষা করবে।