২০ তম গ্রেডের পেনশন কত টাকা

- আপডেট সময় : ১১:৪৫:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫ ১৯৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশে ১৬ তম এবং ২০ তম গ্রেডের পেনশন কত টাকা? এই প্রশ্ন অনেক সরকারি চাকরিজীবী ও তাদের পরিবারের মনে ঘুরপাক খায়। ২০২৫ সালে ১৬ তম গ্রেডের মাসিক পেনশন গড়ে প্রায় ১১,২৪৫ টাকা + চিকিৎসা ভাতা, আর ২০ তম গ্রেডের পেনশন গড়ে প্রায় ১০,০০৫ টাকা + চিকিৎসা ভাতা পাওয়া যায়।
সরকারি চাকরিতে পেনশনের গুরুত্ব
পেনশন শুধু টাকার অঙ্ক নয় — এটি জীবনের শেষভাগে আর্থিক নিরাপত্তার প্রতীক। আমি ছোটবেলায় দেখেছি, আমার এক আত্মীয় যিনি ২০ বছর সরকারি চাকরি করেছেন, অবসরের পর পেনশনের টাকা দিয়ে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালিয়েছেন, চিকিৎসা করিয়েছেন, এমনকি ছোট্ট ব্যবসাও শুরু করেছেন। তাই, ১৬ তম ও ২০ তম গ্রেডের পার্থক্য জানা শুধু চাকরিজীবীদের নয়, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা সবার জন্যই জরুরি।
১৬ তম গ্রেডের বেতন ও পেনশন ২০২৫ সালে
১৬ তম গ্রেড সাধারণত সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট টাইপের পদে প্রযোজ্য। ২০২৫ সালের সরকারি বেতন স্কেল অনুযায়ী, এই গ্রেডের মূল বেতন শুরু হয় ৯,৩০০ টাকা থেকে এবং সর্বশেষ ধাপে পৌঁছায় ২২,৪৯০ টাকায়।
মাসিক পেনশন হিসাব:
অবসরের সময় সর্বশেষ মূল বেতনের ৫০% পাওয়া যায়।
যেমন, যদি কারও শেষ বেতন হয় ২২,৪৯০ টাকা, তাহলে মাসিক পেনশন হবে ১১,২৪৫ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে চিকিৎসা ভাতা — ৬৫ বছরের নিচে ১,৫০০ টাকা, আর ৬৫ বছরের বেশি হলে ২,৫০০ টাকা।
উদাহরণ:
আমার এক বন্ধু সরকারি অফিসে ২৮ বছর চাকরি করার পর অবসর নিয়েছেন। তিনি ১৬ তম গ্রেডে ছিলেন এবং এখন মাসে প্রায় ১২,৭৪৫ টাকা (পেনশন + চিকিৎসা ভাতা) পাচ্ছেন। এই টাকায় তিনি নাতির পড়াশোনা আর নিজের চিকিৎসার খরচ সহজে চালাচ্ছেন।
২০ তম গ্রেডের বেতন ও পেনশন ২০২৫ সালে
২০ তম গ্রেড মূলত পিয়ন, অফিস সহায়ক বা সমমানের পদে প্রযোজ্য। এই গ্রেডের বেতন স্কেল ৮,২৫০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ২০,০১০ টাকায় শেষ হয়।
মাসিক পেনশন হিসাব:
শেষ বেতনের ৫০% দেওয়া হয় পেনশন হিসেবে। যদি শেষ বেতন হয় ২০,০১০ টাকা, তাহলে মাসিক পেনশন হবে ১০,০০৫ টাকা। এর সঙ্গে চিকিৎসা ভাতা যোগ হবে — ১,৫০০ বা ২,৫০০ টাকা বয়স অনুযায়ী।
বাস্তব অভিজ্ঞতা:
আমাদের গ্রামের ডাকবিভাগের এক দারোয়ান অবসরের পর এই গ্রেডে পেনশন পেয়েছিলেন। প্রথমে ভেবেছিলেন, টাকা হয়তো কম হবে, কিন্তু মাসিক পেনশন ও আনুতোষিক মিলে তিনি বাড়ি মেরামত করেছেন এবং একটি মুদি দোকান চালু করেছেন।
১৬ তম এবং ২০ তম গ্রেডের পেনশনের মূল পার্থক্য
- বেতন স্কেল: ১৬ তম গ্রেডে বেতন বেশি, তাই পেনশনও বেশি।
- মাসিক পেনশন: প্রায় ১,২০০–১,৫০০ টাকার পার্থক্য।
- চিকিৎসা ভাতা: উভয় গ্রেডে সমান, তবে মূল পেনশনের ওপর প্রভাব ফেলে না।
- জীবনযাত্রায় প্রভাব: ১৬ তম গ্রেডে পেনশন দিয়ে জীবনযাত্রার মান কিছুটা উঁচু রাখা সহজ হয়।
আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) ও অন্যান্য সুবিধা
পেনশনের পাশাপাশি অবসরের সময় এককালীন একটি বড় অঙ্কের টাকা মেলে, যাকে বলা হয় আনুতোষিক।
হিসাব: (শেষ মূল বেতন × সেবা বছর × হার) ÷ ২
২০–৩০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতায় এই টাকা দাঁড়াতে পারে ৪০–৬০ লাখ পর্যন্ত।
অনেকে এই টাকা দিয়ে জমি কেনেন, ঘর তোলেন বা ব্যবসা শুরু করেন। আমার এক আত্মীয় এই টাকায় পোল্ট্রি ফার্ম খুলে এখনো আয় করছেন।
পেনশন ক্যালকুলেটর ব্যবহার
যারা সঠিকভাবে জানতে চান, তারা অনলাইনে “পেনশন ক্যালকুলেটর বাংলাদেশ” লিখে সার্চ করলেই সরকারি ওয়েবসাইট বা প্রাইভেট টুলে হিসাব করতে পারবেন। শুধু গ্রেড, সেবা বছর এবং শেষ বেতন দিলেই আনুমানিক পেনশন ও আনুতোষিক জানা যাবে।
পেনশনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- এলপিসি (Last Pay Certificate)
- পেনশন আবেদন ফরম
- এনআইডি কপি
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর
- উত্তরাধিকার সনদ (যদি প্রয়োজ্য হয়)
বাংলাদেশে ১৬ তম এবং ২০ তম গ্রেডের পেনশন কত টাকা? এর উত্তর শুধু সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি অবসরের পর নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবনের প্রতিচ্ছবি। যারা এখনও চাকরিতে আছেন, তারা সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং পরিকল্পনা করে রাখলে পেনশন জীবনের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে।