বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানরা জানতে চান- ২০২৫ সালের ঈদে মিলাদুন্নবী কত তারিখে পালিত হবে। ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হবে ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার (১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি) তারিখে।
ঈদে মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য
ঈদে মিলাদুন্নবী হলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস। এ দিনটি ইসলামী দুনিয়ায় গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে পালিত হয়। আমি নিজে ছোটবেলা থেকেই গ্রামের মসজিদে মিলাদ মাহফিলে অংশ নিয়েছি। সেখানে কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া মাহফিল আর মিষ্টি বিতরণ ছিল প্রধান আকর্ষণ।
এই অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পেরেছি—ঈদে মিলাদুন্নবী শুধু একটি ধর্মীয় দিবস নয়, বরং মিলেমিশে থাকার শিক্ষা।
ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ কি?
ঈদে মিলাদুন্নবী তিনটি আরবি শব্দ থেকে এসেছে।
- ঈদ মানে আনন্দ ও উৎসব।
- মিলাদ মানে জন্ম।
- নবী মানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।
অর্থাৎ, ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ হলো:- রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্মদিন উপলক্ষে আনন্দ ও স্মরণ দিবস। এ দিন মুসলিম উম্মাহ তাঁর জীবন, কর্ম এবং শিক্ষা স্মরণ করে দোয়া মাহফিল, মিলাদ ও আলোচনা সভার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।
ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখে
২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুযায়ী, ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দিনটি সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। হিজরি ক্যালেন্ডারে এদিন ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭। এটাই মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ দিন।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালল করা কি জায়েজ?
এই প্রশ্নটি অনেক মুসলমানের মনে আসে। আলেমদের মধ্যে এ বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে।
- সমর্থনকারী আলেমদের মতে:
নবীজীর জন্মদিন স্মরণ করা, দরুদ পাঠ, কোরআন তিলাওয়াত ও ইসলামী আলোচনা করা জায়েজ। এটি নবীর প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি উপায়। - বিরোধী আলেমদের মতে:
সাহাবা (রা.) বা তাবেয়ীনরা এভাবে দিনটি পালন করেননি। তাই এটি বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
যদি ঈদে মিলাদুন্নবী এমনভাবে পালিত হয় যেখানে কোরআন-হাদিসভিত্তিক আলোচনা, দরুদ, দোয়া ও শিক্ষা থাকে, তবে এটি অনেক আলেমের মতে জায়েজ। কিন্তু অপচয়, গান-বাজনা বা ইসলামবিরোধী কোনো কাজ হলে তা জায়েজ নয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপন
পাকিস্তান, ভারতসহ অনেক দেশে এ দিনটিতে বিশেষভাবে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে কিছু দেশে সরকারি ছুটি থাকে না, শুধু মসজিদে সীমিত আকারে পালিত হয়। বাংলাদেশে সরকারি উদ্যোগে ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কর্মসূচি হাতে নেয়।
বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবীর আয়োজন
বাংলাদেশে এই দিনটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালিত হয়। ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে রাষ্ট্রীয়ভাবে বড় অনুষ্ঠান হয়। গ্রামে গ্রামে স্থানীয় মসজিদ ও মাদ্রাসায় কোরআন খতম, মিলাদ ও মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
আমি নিজে ২০২৪ সালে ঢাকায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। সেখানে বক্তারা নবীজীর জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়ার গুরুত্ব বুঝিয়ে দেন।
কেন এই দিনটি এত গুরুত্বপূর্ণ
মহানবী (সা.)-এর জীবনীতে দয়া, সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও মানবতার বার্তা রয়েছে। ঈদে মিলাদুন্নবী আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা যেন তাঁর আদর্শ মেনে জীবন গড়তে পারি। যেমন: প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসা, দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানো, সত্য কথা বলা। এগুলো শুধু ধর্মীয় মূল্যবোধ নয়, বরং প্রতিদিনের জীবনে প্রযোজ্য বাস্তব শিক্ষা।
আমার শেষ মন্তব্য
২০২৫ সালের ঈদে মিলাদুন্নবী পড়বে ৬ সেপ্টেম্বর, শনিবার। দিনটি আমাদের জন্য নবী করিম (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও তাঁর আদর্শের প্রতি অঙ্গীকার পুনর্নবীকরণের সুযোগ। আমরা যেন এই দিনটি শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না রেখে তাঁর শিক্ষাকে জীবনে কাজে লাগাতে পারি।
কল্যাণ অনুদান বাড়ল সরকারি কর্মচারীদের জন্য।আরো বিস্তারিত জানতে এইখানে যান।