বর্তমানে হাই প্রেসার কমানোর জন্য কি খাওয়া উচিত

- আপডেট সময় : ১১:৫৯:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫ ৯৪ বার পড়া হয়েছে
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার এখন অনেকেরই নিত্যদিনের সমস্যা। সঠিক উত্তর হলো: হাই প্রেসার কমানোর জন্য শাকসবজি, ফলমূল, আঁশযুক্ত খাবার, স্বাস্থ্যকর প্রোটিন ও কম লবণযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
হাই প্রেসার কমানোর জন্য কি খাওয়া উচিত
আমার এক পরিচিত আত্মীয় দীর্ঘদিন ধরে হাই প্রেসারে ভুগছিলেন। তিনি প্রতিদিন সকালে আধা ঘণ্টা হাঁটতেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শমতো খাবার তালিকায় কিছু পরিবর্তন করেছিলেন। শুধু এই সহজ পরিবর্তনের মাধ্যমেই তার রক্তচাপ অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। তাই আমি এখানে সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে চিকিৎসক-পরামর্শিত খাবারের তালিকা তুলে ধরছি।
শাকসবজি: প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
পালং শাক, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, ব্রকলি ও গাজর হাই প্রেসার কমাতে খুব কার্যকর। কারণ এসব সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও আঁশ, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিন ভাতের সঙ্গে এক বাটি ভাজি বা সবজি রান্না খেলে শরীরের জন্য উপকারী।
ফলমূল: হাই ব্লাড প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়
কলা, কমলা, আঙ্গুর, আপেল ও তরমুজ হাই প্রেসার রোগীদের জন্য আদর্শ ফল। বিশেষ করে কলায় পটাশিয়াম রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। আমার এক বন্ধুর অভ্যাস ছিল সকালে নাশতার পর একটি কলা খাওয়ার।
তিনি লক্ষ্য করেছেন, নিয়মিত খাওয়ার ফলে তার মাথা ভার লাগা বা মাথাব্যথা অনেকটা কমে গেছে।
আঁশযুক্ত খাবার ও শস্য
ব্রাউন রাইস, ওটস, গমের রুটি ও ডাল খেলে শরীর দীর্ঘ সময় শক্তি পায় এবং রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষ বেশি আঁশযুক্ত খাবার খায়, তাদের হাই প্রেসারের ঝুঁকি অনেকটা কম।
স্বাস্থ্যকর প্রোটিন ও উপকারী ফ্যাট
মাছ, বিশেষ করে ইলিশ ও রুই, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডে সমৃদ্ধ। এগুলো হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। বাদাম, আখরোট ও ফ্ল্যাক্সসিডও একইভাবে উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সামান্য করে এসব যুক্ত করলে দীর্ঘমেয়াদে উপকার পাওয়া যায়।
কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
হাই প্রেসার রোগীদের জন্য কিছু খাবার মারাত্মক ক্ষতিকর।
- অতিরিক্ত লবণ বা নোনতা খাবার
- ভাজা ও ঝালযুক্ত খাবার
- প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন ইনস্ট্যান্ট নুডলস, চিপস, প্যাকেট স্যুপ
- অতিরিক্ত মিষ্টি, কোমল পানীয় বা ডেজার্ট
আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যারা প্রতিদিন বেশি লবণ খান, তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা অনেক কঠিন হয়।
পানীয়: হাই প্রেসার রোগীদের জন্য নিরাপদ
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- লেবু পানি শরীরকে সতেজ রাখে এবং সোডিয়াম কমাতে সাহায্য করে।
তবে কোমল পানীয় ও অতিরিক্ত ক্যাফেইন এড়ানো ভালো।
চিকিৎসকের পরামর্শ ও নিয়মিত অভ্যাস
খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে। শুধু খাবারের উপর নির্ভর করলে সব সময় ফল পাওয়া যায় না। একজন চিকিৎসক আমার এক আত্মীয়কে বলেছিলেন: “আপনি যদি খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখেন, তবে ওষুধও কম লাগবে।”
জীবনধারা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন।
- মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান, প্রার্থনা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
- ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম নিন।
এগুলো না মানলে শুধু খাবার পরিবর্তন করে হাই প্রেসার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়।
আমার শেষ মন্তব্য
হাই প্রেসার কমানোর জন্য কি খাওয়া উচিত? এর উত্তর এক কথায় হলো: স্বাস্থ্যকর শাকসবজি, ফলমূল, আঁশযুক্ত শস্য, কম লবণ, মাছ ও বাদামকে খাবারের তালিকায় রাখুন।
একই সঙ্গে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত লবণ, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন। যদি আমরা ছোট ছোট পরিবর্তন করি, যেমন ভাজা খাবারের বদলে সেদ্ধ সবজি খাওয়া বা কোমল পানীয়ের বদলে লেবু পানি খাওয়া, তবে সহজেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মনে রাখবেন, খাবারের সাথে জীবনধারার পরিবর্তনই হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি।