লো প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় কি? এটা অনেকেরই সাধারণ প্রশ্ন, বিশেষ করে যারা হঠাৎ মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব করেন। সঠিক উত্তর: লো প্রেসার কমাতে ঘরে বসে বেশি পানি পান করা, লবণযুক্ত পানীয় গ্রহণ, কফি বা কালো চা খাওয়া, ডাবের পানি পান, ছোট ছোট খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া সবচেয়ে কার্যকর ঘরোয়া উপায়।
লো প্রেসার কী এবং কেন হয়
লো প্রেসার বা হাইপোটেনশন হলো যখন আমাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার নিচে নেমে যায়। সাধারণত ৯০/৬০ mmHg এর নিচে রক্তচাপকে লো প্রেসার ধরা হয়। এটা হতে পারে পানিশূন্যতা, অপুষ্টি, অতিরিক্ত ঘাম, হঠাৎ দেহের অবস্থান পরিবর্তন বা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার কারণে।
আমার একবার গরমের দিনে বাজার করতে করতে প্রচুর ঘাম হয়েছিল, তারপর হঠাৎ মাথা ঘুরে বসে পড়েছিলাম। পরে বুঝেছিলাম রক্তচাপ অনেক কমে গিয়েছিল। এটাই আমাকে লো প্রেসারের ঘরোয়া উপায় খুঁজতে উৎসাহিত করেছিল।
লো প্রেসারের সাধারণ উপসর্গ
- মাথা ঘোরা
- দুর্বল লাগা
- চোখে অন্ধকার দেখা
- অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব
- বমি বমি ভাব বা হালকা বুক ধড়ফড় করা
উদাহরণস্বরূপ, অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে অনেকেই হঠাৎ মাথা ঘোরা বা ঝিম ধরা অনুভব করেন। বেশিরভাগ সময় এগুলোই লো প্রেসারের লক্ষণ।
লো প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় কি জানুন
বেশি করে পানি পান করুন
শরীরে পানিশূন্যতা লো প্রেসারের প্রধান কারণ। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে চাপ স্বাভাবিক থাকে।
লবণযুক্ত পানীয় গ্রহণ
ORS, স্যুপ বা লবণ মেশানো হালকা লেবুর শরবত রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। আমি নিজে একবার অজ্ঞান হওয়ার কাছাকাছি অবস্থা থেকে লবণ মিশ্রিত পানি খেয়ে স্বাভাবিক হয়েছিলাম।
কফি বা কালো চা
ক্যাফেইন রক্তনালী সংকুচিত করে সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়ায়। তাই সকালে বা বিকেলে এক কাপ কালো চা খাওয়া ভালো উপায় হতে পারে।
কিশমিশ ভেজানো পানি
রাতে কিশমিশ ভিজিয়ে সকালে পানি সহ খেলে রক্তচাপের ভারসাম্য রাখতে সহায়তা করে।
ডাবের পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট
গরমকালে ডাবের পানি শরীরকে শুধু ঠান্ডা করে না, লো প্রেসার থেকে দ্রুত মুক্তিও দেয়।
ছোট ছোট খাবার খাওয়া
একসাথে ভারী খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে খাওয়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
লো ব্লাড প্রেসারের ঘরোয়া চিকিৎসা
লো প্রেসার হলে শুধু খাবার বা পানীয় নয়, জীবনধারার পরিবর্তনও জরুরি।
- পর্যাপ্ত ঘুম: রাতে কমপক্ষে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
- নিয়মিত ব্যায়াম: হালকা ব্যায়াম রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে।
- স্ট্রেস কমানো: অতিরিক্ত মানসিক চাপও লো প্রেসারের কারণ হতে পারে।
- অ্যালকোহল ও ধূমপান এড়ানো: এগুলো রক্তচাপ হঠাৎ কমিয়ে দেয়।
লো প্রেসার কত হলে বিপজ্জনক?
যদি রক্তচাপ ৭০/৫০ mmHg এর নিচে নেমে যায় এবং বারবার মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়, তবে তা বিপজ্জনক। এই অবস্থায় বাড়িতে না থেকে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
লো প্রেসার হলে কী খাবেন
- লবণাক্ত খাবার (স্যুপ, আচার, সালাইন)
- ডাবের পানি
- কলা, আপেল, কমলালেবু
- কিশমিশ, বাদাম
- কালো চা বা কফি
এগুলো নিয়মিত খেলে শরীর দ্রুত শক্তি ফিরে পায়।
কখন ডাক্তার দেখানো উচিত
লো প্রেসার সাধারণত ঘরোয়া উপায়ে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। যদি বারবার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, হঠাৎ বুক ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, অথবা দীর্ঘদিন ধরে রক্তচাপ কমে থাকে, তবে অবহেলা না করে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করা উচিত।
একইভাবে, অন্য কোনো গুরুতর রোগের কারণে যদি লো প্রেসার হয়, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। সময়মতো চিকিৎসকের কাছে গেলে জটিলতা কমে এবং দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব হয়।
আমার শেষ মন্তব্য
লো প্রেসার সাধারণত খুব ভয়ংকর নয়, তবে অবহেলা করলে সমস্যা বাড়তে পারে। লো প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় কি? এ প্রশ্নের উত্তর হলো পানি পান, লবণযুক্ত তরল গ্রহণ, কফি বা ডাবের পানি খাওয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও সঠিক জীবনধারা। তবে যদি বারবার সমস্যা হয়, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
হাই প্রেসার কমানোর জন্য কি খাওয়া উচিত? আরো বিস্তারিত জানতে এইখানে যান।